বিনোদন জগৎ

প্রতিদিনের বিনোদন আয়োজন...........

বিনোদন জগতের সর্বশেষ খবর

Sunday, January 7, 2018

একটি নাটকের জন্য হয়েছিল দেশব্যাপী আন্দোলন !

বাংলাদেশ টেলিভিশনে  প্রচারিত জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ রচিত “কোথাও কেউ নেই” বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অন্যতম দর্শক নন্দিত ধারাবাহিক। ধারাবাহিক নাটকটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিল “বাকের ভাই (আসাদুজ্জামান নূর)”। বাকের ভাই গুন্ডা প্রকৃতির লোক ছিল। মহল্লার চায়ের দোকানেই ছিল তাদের আড্ডা। তার সার্বক্ষনিক সঙ্গী ছিল "বদি (আবদুল কাদের)" আর "মজনু (লুতফর রহমান জর্জ)", তারা তিনজনই মোটর সাইকেলে করে চলাফেরা করতো। বেশির ভাগ সময়ই মোটর সাইকেল চালাতো মজনু, বদি পিছনে এবং বাকের ভাই বসতো মাঝে। বাকের ভাইয়ের একটা মুদ্রাদোষ ছিল, সে একটা চেইন হাতের তর্জনিতে অনবরত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচাতো, আবার উল্টোদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচ খুলে আবার প্যাঁচাতো। সক্রিয় ডায়লগ না থাকলে প্রায়ই তাকে এরকম করতে দেখা যেত। ভাইয়ের একটি পছন্দের ডায়ালগ ছিল “মাইরের মধ্যে ভাইটামিন আছে”। বাকের ভাই একটি পছন্দের হিন্দী গান ছিল “হাওয়া মে উড়তা যায়ে, মেরা লাল দোপাট্টা...মল মল কা হো জি...হো জি।” 
বাকের ভাইকে পছন্দ করতো "মুনা (সুবর্ণা মোস্তফা)"। মুনা এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। সে চাকরি করে, এবং তার মামাতো ভাই-বোনদের দেখাশোনা করে। বাকের ভাই এলাকার মাস্তান হলেও অধিকাংশ মানুষ তাকে ভালোবাসতো, কারণ সে ছিল সর্বদা সত্যের পূজারী নিপীড়িত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে যেমন কুন্ঠিত হতো না, তেমনি সমাজের অন্যায় কাজকেও মুখ বুজে মেনে নিত না, নিজের গুন্ডাদের দিয়ে তা কঠোর হস্তে দমন করতো। ঘটনা প্রবাহে বাকের ভাই “রেবেকা হক (নাজমা আনোয়ার)” নামের এলাকার প্রভাবশালী এক নারীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ঐ নারী তার বাড়িতে অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন, বাকের ভাই তা জানতে পেরে প্রতিবাদ করে। এই প্রভাবশালী নারী তার বাড়িতে কুকুর পালন করতেন বলে বাকের ভাই তাকে “কুত্তাওয়ালী” বলেন। এরই মধ্যে রাতের অন্ধকারে "কুত্তাওয়ালীর" দারোয়ান তার বাড়িতে খুন হয়। ফাঁসানোর জন্য এই খুনের দায় দেয়া হয় বাকের ভাইকে, সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয় কুত্তাওয়ালী'র সাজানো সাক্ষী এলাকার নতুন ছিনতাইকারী “মতি (মাহফুজ আহমেদ)”। যদিও পদে পদে মতির মিথ্যা সাক্ষ্য বাকের ভাইয়ের উকিল আদালতে ধরিয়ে দিচ্ছিলেন, কিন্তু এদিকে বাকের ভাইকে ফাঁসানোর জন্য কুত্তাওয়ালী লোভ দেখিয়ে বাকের ভাইয়েরই সাগরেদ বদিকে হাত করে নেয় এবং বদিকে রাজ সাক্ষী বানায়। 
বদি, নিরুপায় হয়ে আদালতে শপথ করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে বাকের ভাইকে পাকাপোক্তভাবে ফাঁসিয়ে দেয়। আদালত, ঐ খুনের দায়ে নির্দোষ বাকের ভাইকে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেন। বাকের ভাইয়ের পক্ষে উকিল হিসেবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হোন উকিল “হুমায়ূন ফরিদী”। আদালতের এই সিদ্ধান্তে যেন মরে যায় মুনার মন। এদিকে মুনার ঘরের সবাইও বিভিন্ন জায়গায় চলে যায়। এই একাকিত্বের দিনে এক ভোরে, আদো-অন্ধকারে, চারদিকে যখন ফজরের আযান হচ্ছিল, জেল গেট দিয়ে বাকের ভাইয়ের লাশ বের করে দেয়া হয়। কেউ ছিল না সেই লাশ গ্রহণ করার জন্য মুনা ছাড়া। সৎকার করার পর, মুনা বড় একা হয়ে যায়। তার যেন আর কেউ রইলো না কোথাও। নাটকের নামকে সার্থক করে মুনা ধারাবাহিকের শেষ দৃশ্যে ভোরের আদো-অন্ধকারে ছায়া হয়ে একা এক প্রান্তরে দাঁড়িয়ে থাকে।


বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রদর্শিত এই টিভি ধারাবাহিক এতোটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, ধারাবাহিকটির প্রতিটা পর্ব, দর্শকরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করতেন। ধারাবাহিকের অগ্রগতির সাথে সাথে দর্শকরা বাকের ভাইকে পছন্দ করে ফেলেন এবং বাকের পক্ষে জনমত গড়ে উঠে। একপর্যায়ে যখন বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হবার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠে, উকিল হুমায়ূন ফরিদি শত চেষ্টাসত্ত্বেয় খেই হারিয়ে ফেলছেন এই কেসে, তখন দর্শকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে; চলতে থাকে মিছিল, দেয়াল লিখন, সমাবেশ ঢাকা শহর সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজন মিছিল করে স্লোগান দিতে থাকে:

“বাকের ভাইয়ের ফাঁসি কেন, কুত্তাওয়ালী জবাব চাই” 

“বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে”


ধারাবাহিক নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে যাঁরা অভিনয় করেছেন: সুবর্ণা মোস্তফা, আসাদুজ্জামান নূর, আবদুল কাদের, লুতফর রহমান জর্জ, মাহফুজ আহমেদ, আফসানা মিমি, হুমায়ূন ফরিদী, মোজাম্মেল হোসেন, সালেহ আহমেদ, আবুল খায়ের নাজমা আনোয়ার, শহীদুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment

loading...